খুলনার শিববাড়ি মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্পোরাল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এক পা হারিয়ে এখন অসহায় জীবন যাপন করছেন। সংসারে দেখা দিয়েছে অস্বচ্ছলতা। ধার দেনা করে ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কিংবা রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা কিংবা কোন সহানুভূতি পায়নি বলে অভিযোগ পা হারানো জাহাঙ্গীর আলমের। জাহাঙ্গীর আলম বসবাস করেন দৌলতপুর থানার বনিকপাড়া শান্তিনগর এলাকায় নিজ বাড়িতে।
খুলনা গেজেটকে তিনি বলেন, ২০১১ সালে সেনাবাহিনীর কর্পোরাল পদে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর বাড়ি আসি। দুই বছর পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দিলে সামান্য বেতনে ফুলবাড়িগেট একটি স্যানিটারি দোকানে চাকরি শুরু করি। আমার ছোট ছেলে শিরোমনি খানজাহান আলী কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল। ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল বলিছিলো যাদের গার্ডিয়ান আছে তারাও আন্দোলনে শরিক হতে পারে। সেজন্য আমিও ৪ আগস্ট খুলনা শিববাড়ি মোড়ে আন্দোলনে গিছিলাম। যাওয়ার পর আমার এই করুন অবস্থা হলো।
তিনি বলেন, ৪ তারিখ সকালে আন্দোলনের সময় আমি আমার ছেলের পিছু পিছু বাড়ি থেকে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে যায়। সেখানে পুলিশের গুলিতে রাবার বুলেটের ৫ টি গুলি আমার বাম পায়ে এসে লাগে। গুলি লাগার পর সেখান থেকে আমি সরাসরি যশোর সিএমএইচে যায়। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা ৩ বার অপারেশন করে একটু একটু করে আমার পায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলে। এরপর আমি বাড়ি চলে আসি। বাড়ি আসার পর আমার পায়ে আবারও পচন দেখা দেয়। তখন আমি আবার সিএমএইচে যায়। চতুর্থ বারের মতো সেখানে আমার পা কেটে ফেলা হয়। পা কেটে ফেলার পর সিএমএইচে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি আসার পর দেখি আমার সংসারের অবস্থা নাজেহাল। একটা দোকানে চাকরি করতাম সেটাও নেই। এখন বড় অসহায়ের মধ্যে আছি। ডাক্তার দেখানোর জন্য সিএমএইচে যাওয়ার কোন সামর্থ্য নেই। ওষুধ কিনে খাওয়ারও সামর্থ্য নেই। বাড়ি আসার পর ১০/১২ হাজার টাকার ওষুধ বাকিতে কিনে খেয়েছি। এ পর্যন্ত কোন জায়গা থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। সংসারে মোট সদস্য সংখ্যা ৬ জন। অনেক কষ্টে চলতিছি। এমন সময় আছে অনেকে খায়, অনেকে খায়না। এভাবে চলতিছে।
তিনি বলেন, সিএমএইচ এর চিকিৎসকরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল পায়ের এই অবস্থা কি করে হলো? ভবিষ্যতে আমার পেনশনের সমস্যা হতে পারে এ কারণে পায়ে রাবার বুলেট লাগার বিষয়টি তাদেরকে জানাইনি। আমার ডায়াবেটিস ছিল যে কারণে পায়ে রাবার বুলেট লাগার পর পচন ধরে।
জাহাঙ্গীর আলমের সহধর্মিনী মিরিনা খাতুন বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে আমার ছেলে খুলনায় নিয়মিত যাতো। ৪ তারিখ সকালে খুলনায় আমার ছেলে আগে গেছে তারপর ওর বাবা গেছে। আমি খোঁজাখুঁজি করে জানতে পারি ওর বাবা আন্দোলনে গেছে। তারপর পায়ে গুলি ল্যাগে সিএমএইচে যায়ে পা কেটে ফেলতে হইছে। এখন তো অসহায়। হুইল চেয়ারে ভর করে চলাফেরা করতে হচ্ছে। একটা দোকানে কাজ করত সেটাও করতে পারে না। এখন আমাদের অবস্থা খুব শোচনীয়। এ পর্যন্ত কেউ কোন খোঁজ খবর নেয়নি যে গুলি লাগিছে। কোন সাহায্য সহযোগিতাও পায়নি। এখন যে আমাদের কি অবস্থা বলে বোঝাতে পারবো না?
এ ব্যাপারে কথা হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি মিনহাজুল আবেদীন সম্পদের সাথে। খুলনা গেজেটকে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে যারা আহত হয়েছেন তাদের সহায়তার জন্য খুব দ্রুতই জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি হবে। স্বাস্থ্য কমিটি যাচাই-বাছাই করে যে সকল শিক্ষার্থী, ভাইয়েরা, আপুরা আহত হয়েছেন তাদের তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।
খুলনা গেজেট/এনএম